অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর! ইনকামিং কলকে আরও আকর্ষণীয় করতে গুগল নিয়ে আসছে নতুন ‘কলিং কার্ড’ ফিচার। আইফোনের জনপ্রিয় ‘কন্টাক্ট পোস্টার’-এর আদলে তৈরি এই ফিচারটি কীভাবে আপনার ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বদলে দেবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
গুগল কলিং কার্ড: আইফোনের ‘কন্টাক্ট পোস্টার’কে কি টেক্কা দেবে?
একটা সময় ছিল যখন অ্যান্ড্রয়েড আর আইওএস (iOS) সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি জগত ছিল। এক প্ল্যাটফর্মে যা ছিল, অন্যটিতে তা খুঁজে পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই দুই টেক জায়ান্ট—অ্যাপল (Apple) এবং গুগল (Google)—একে অপরের ভালো ফিচারগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের অপারেটিং সিস্টেমকে সমৃদ্ধ করছে। এই সুস্থ প্রতিযোগিতার সর্বশেষ উদাহরণ হলো গুগলের নতুন ‘কলিং কার্ড’ (Calling Card) ফিচার, যা সরাসরি আইফোনের জনপ্রিয় ‘কন্টাক্ট পোস্টার’ (Contact Poster)-এর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হিসেবে আমরা প্রায়শই অভিযোগ করি, ইনকামিং কলের স্ক্রিনটি খুব একঘেয়ে এবং তথ্যে ভরা থাকে। বিশেষ করে যখন আপনি তাড়াহুড়োয় থাকেন, তখন কে কল করেছে তা দ্রুত বুঝতে পারা কঠিন। আইফোন ব্যবহারকারীরা অনেকদিন ধরেই তাদের কল স্ক্রিন কাস্টমাইজ করার সুবিধা উপভোগ করছিলেন, আর এখন গুগল সেই সুযোগটি নিয়ে এসেছে অ্যান্ড্রয়েডে।
এই লেখায় আপনি যা জানতে পারবেন
- ‘কলিং কার্ড’ কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
- আইফোনের ‘কন্টাক্ট পোস্টার’-এর সাথে এর মূল পার্থক্য কী?
- কীভাবে এই নতুন ফিচারটি আপনার ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও ব্যক্তিগত করবে?
- কখন এবং কীভাবে আপনি আপনার ফোনে এই ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবেন?
গুগল কলিং কার্ড: কল স্ক্রিনের নতুন চেহারা
আপনি কি কখনও ভেবেছেন, আপনার প্রিয় বন্ধুর ফোন এলে স্ক্রিনে শুধু তার নাম আর নম্বর না দেখে যদি তার একটি বড়, ঝকঝকে ছবি দেখতে পেতেন? বা আপনার মা কল করলে তার হাসিমাখা মুখটা পুরো স্ক্রিন জুড়ে ভেসে উঠতো? গুগলের নতুন ‘কলিং কার্ড’ ফিচারটি ঠিক এই কাজটিই করে।
এই ফিচারটি ইনকামিং কলের সময় কলকারী ব্যক্তির একটি বড়, উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি প্রদর্শন করে। ছবির পাশাপাশি আপনি আপনার পছন্দমতো ফন্ট (Font) এবং রঙ (Color) দিয়ে সেই ব্যক্তির নাম বা অন্যান্য তথ্য সাজিয়ে নিতে পারবেন। গুগল জানিয়েছে, এটি তাদের নতুন Material You ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজের একটি অংশ, যা ব্যবহারকারীকে আরও বেশি কাস্টমাইজেশন বা ব্যক্তিগতকরণের স্বাধীনতা দেয়।
একজন টেক রিভিউয়ার হিসেবে আমার মনে হয়, এই ফিচারটি কেবল একটি নান্দনিক পরিবর্তন নয়, বরং এটি ব্যবহারিক দিক থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভিড়ে বা চলমান অবস্থায় যখন ফোনের স্ক্রিনে ছোট নাম বা ছবি দেখা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন এই বড় ভিজ্যুয়াল কার্ডটি খুবই সহায়ক হবে।
আইফোন Contact Poster vs. গুগল Calling Card: কোথায় মিল, কোথায় অমিল?
আইফোন ব্যবহারকারীরা iOS 17 আপডেটের পর থেকে ‘কন্টাক্ট পোস্টার’ সুবিধাটি ব্যবহার করছেন। এটিও ইনকামিং কলের সময় কন্টাক্টের একটি কাস্টমাইজযোগ্য ছবি বা মেমোজি প্রদর্শন করে। স্বাভাবিকভাবেই, গুগলের এই পদক্ষেপটি একটি সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মূল মিলগুলো:
- ব্যক্তিগতকরণ: উভয় ফিচারই ব্যবহারকারীকে ইনকামিং কল স্ক্রিন কাস্টমাইজ করার সুযোগ দেয়।
- দৃশ্যমানতা: দুটিই বড় ছবি বা অ্যানিমেটেড অবতার প্রদর্শন করে, যা কলকারীকে দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- ফন্ট ও স্টাইল: উভয় প্ল্যাটফর্মেই ফন্ট ও রঙ পরিবর্তন করে নামকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার সুযোগ আছে।
মূল পার্থক্যগুলো:
- বিস্তার: আইফোনে ‘কন্টাক্ট পোস্টার’ কেবল সেইসব আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য কাজ করে যারা iOS 17 বা তার পরের সংস্করণ ব্যবহার করছেন এবং একে অপরের কন্টাক্ট পোস্টার শেয়ার করার অনুমতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, গুগলের ‘কলিং কার্ড’ ফিচারটি শুধু আপনার নিজের ফোনেই কাজ করবে। এটি অন্য ব্যবহারকারীকে আপনার কার্ড দেখাবে না, বরং আপনি আপনার ফোনে সেভ করা প্রতিটি কন্টাক্টের জন্য আলাদাভাবে কার্ড তৈরি করতে পারবেন।
- নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা: গুগলের পদ্ধতিটি আরও বেশি নিরাপদ। যেহেতু কলিং কার্ডের ডেটা শুধু আপনার ফোনেই সংরক্ষিত থাকে, তাই তা অন্যদের সাথে শেয়ার করার কোনো ঝুঁকি নেই। ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে যাবে না।
- ডিজাইন ফিলোসফি: গুগলের কলিং কার্ড ম্যাটেরিয়াল থ্রি ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজের অংশ, যা অ্যান্ড্রয়েডের সামগ্রিক থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে, অ্যাপলের কন্টাক্ট পোস্টার আইওএস-এর নিজস্ব ভিজ্যুয়াল স্টাইল অনুসরণ করে।
কীভাবে কাজ করবে এই নতুন ফিচার?
গুগলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ফিচারটি ধাপে ধাপে চালু করা হবে। যখন আপনার ডিভাইসে এই সুবিধা চালু হবে, তখন গুগল ফোন অ্যাপের হোম ট্যাবে একটি নোটিফিকেশন বা বার্তা দেখতে পাবেন।
ধাপে ধাপে কলিং কার্ড তৈরির পদ্ধতি:ধাপ ১: অ্যাক্টিভেশন: ফিচারটি চালু হলে ফোন অ্যাপ অথবা কন্টাক্টস অ্যাপে প্রবেশ করুন। একটি নতুন ‘ক্রিয়েট কলিং কার্ড’ অপশন দেখতে পাবেন।
ধাপ ২: কন্টাক্ট নির্বাচন: আপনি যে কন্টাক্টের জন্য কলিং কার্ড তৈরি করতে চান, সেই কন্টাক্টটি নির্বাচন করুন। মনে রাখবেন, প্রতিটি কন্টাক্টের জন্য আপনাকে আলাদাভাবে কার্ড তৈরি করতে হবে।
ধাপ ৩: ছবি ও স্টাইল নির্বাচন: এবার আপনার গ্যালারি, গুগল ফটোজ থেকে একটি ছবি বেছে নিন অথবা সরাসরি ক্যামেরা ব্যবহার করে নতুন ছবি তুলুন। ছবিটি আপনার পছন্দমতো ক্রপ ও সাজানোর সুযোগ থাকবে। ছবির পাশাপাশি নাম, ফন্ট ও রঙের স্টাইলও পরিবর্তন করুন।
ধাপ ৪: সেভ ও ব্যবহার: সব কিছু ঠিকঠাক হলে কার্ডটি সেভ করুন। এখন থেকে যখনই ওই কন্টাক্ট থেকে আপনার ফোনে কল আসবে, তখন সেই কাস্টমাইজড কলিং কার্ডটি স্ক্রিনে ভেসে উঠবে।
এটি একটি অত্যন্ত সহজ ও স্বজ্ঞাত প্রক্রিয়া। আমার মনে হয়, যারা তাদের স্মার্টফোনকে আরও ব্যক্তিগত স্পর্শ দিতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই ফিচারটি একটি দারুণ উপহার।
আইফোনের ‘কন্টাক্ট পোস্টার’ আসার পর অনেক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন তারা ব্যক্তিগতকরণের একটি দারুণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু গুগলের এই নতুন ‘কলিং কার্ড’ ফিচারটি সেই অভাব পূরণ করেছে। এটি কেবল একটি ফিচারের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং গুগল তাদের নিজস্ব দর্শন এবং নিরাপত্তার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়ে এটিকে আরও ব্যবহারিক করে তুলেছে।
এই ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েডের ব্যবহার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে। এটি প্রমাণ করে, স্মার্টফোন জগতে কেবল নতুন হার্ডওয়্যার নয়, বরং ছোট ছোট সফটওয়্যার পরিবর্তনও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, গুগল ভবিষ্যতে আরও এমন আকর্ষণীয় এবং ব্যবহার-বান্ধব ফিচার নিয়ে আসবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: গুগল কলিং কার্ড কি সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনে পাওয়া যাবে?
উত্তর: গুগল জানিয়েছে এটি ধাপে ধাপে চালু করা হবে। মূলত গুগলের নিজস্ব ফোন অ্যাপে এই ফিচারটি যুক্ত হচ্ছে, যা অনেক অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ডিফল্ট ফোন অ্যাপ হিসেবে থাকে। আপনার ফোনে Google Phone অ্যাপ থাকলে ফিচারটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
প্রশ্ন ২: কলিং কার্ড কি শুধু অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মধ্যে কাজ করবে?
উত্তর: না, এই ফিচারটি শুধু আপনার নিজের ফোনেই কাজ করবে। আপনি আপনার ফোনে সেভ করা প্রতিটি কন্টাক্টের জন্য কার্ড তৈরি করতে পারবেন, সে কন্টাক্টটি অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন ব্যবহারকারী যেই হোক না কেন।
প্রশ্ন ৩: কলিং কার্ডের ছবি অন্য কাউকে দেখা যাবে কি?
উত্তর: না। গুগলের মতে, কলিং কার্ড শুধু আপনার ফোনেই সংরক্ষিত থাকবে। এটি অন্য ব্যবহারকারীদের কাছে পাঠানো হবে না, তাই আপনার ডেটা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
প্রশ্ন ৪: এই ফিচারটি ব্যবহারের জন্য কি গুগল ফটোজ প্রয়োজন হবে?
উত্তর: না, এটি ঐচ্ছিক। আপনি আপনার ফোনের গ্যালারি, গুগল ফটোজ বা সরাসরি ক্যামেরা থেকে ছবি ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রশ্ন ৫: কলিং কার্ড ব্যবহার করতে কি ইন্টারনেট সংযোগ লাগবে?
উত্তর: একবার কার্ড তৈরি হয়ে গেলে এটি অফলাইনেও কাজ করবে, কারণ ডেটা আপনার ডিভাইসেই সংরক্ষিত থাকে।
আপনার ফোনে ‘কলিং কার্ড’ ফিচারটি চালু হলে আপনি কোন কন্টাক্টের জন্য সবার আগে কার্ড তৈরি করবেন? আপনার মতামত নিচে কমেন্ট করে জানান!
সূত্র: দ্য ভার্জ
আরও পড়ুন: iPhone 17 Launch Date: বাংলাদেশে আইফোন ১৭ কবে আসবে? দাম কত হবে?